filmov
tv
Eta Kolpona Chakmar gaan | Shayan| Cover | Fasih

Показать описание
"বিশ্ব আদিবাসী দিবসের শুভেচ্ছা।"
সময়টা ছিল জুন মাসের ৬ তারিখ। আমরা যারা মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে খোপ গেড়ে বসি, তারা জানি টানা মাস ছয়েক গেলেই কেমন দম বন্ধ লাগে। বাড়ির জন্যে মন কেমন করে, বাড়ির পাশের বাতাস শোকার জন্য ফুসফুস হাহাকার করে। হয় বাড়ি যাই, না হয় আমরা একটু প্রকৃতির কাছে যাই।
আমার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টা থেরাপিউটিক মেডিসিনের মত কাজ করে। পাহাড় ছাড়া অদ্ভুত সুন্দর সবুজের বিকল্প পাই না আমি। খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়ে হলেও একটু পাহাড়ে যাওয়া চাই। টাকার যোগাড় কম হলে ট্রেনের মেঝেতে বসেই সই। তবু পাহাড়ে যাওয়া চাই।
এইটুকু গল্প আমাদের শহরের মন ভালোই জানে। কিন্তু আমাদের শহরের মন পাহাড়ের মানুষের মন কতটাই বা বোঝে?
প্রতিবার পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রচুর টগবগ রক্তপ্রবাহ নিয়ে বের হই, এড্রেনালিন রাশে মাথা ফেটে যায়। অথচ ফেরার সময় প্রতিবার বুক ভারী লাগে। প্রতিবার ফিরে পানি ব্যবহারে আরও সচেতন হই, কারণ আমরা যান্ত্রিক মানুষেরা কল ঘুরালেই গলগল করে বেরিয়ে আসে পানি। গাড়ি করে পাহাড়ি রাস্তা দেখে চোখ যখন "আহা! মধু।" করে, তখনই বুক কেঁপে উঠে ৩-৪ বছরের ছোট বাচ্চাগুলোকে ২-৩লিটার পানির বোতল পিঠে করে মায়ের সাথে উপরে উঠতে দেখে। আর ওদিকে মায়ের পিঠে বোধহয় পানির বোতলের জাহাজ হবে।
পাহাড়ে গিয়ে এবার আম কিনলাম- প্রতি কেজি ৪০টাকা মাত্র। মধ্যবিত্তর সন্তান, সবকিছুতেই দামাদামি করার স্বভাব। ৪০ থেকেও ভেবেছিলাম কিছু কম দিয়ে কেনা যায় কীনা।
প্রচুর সস্তা আম পেয়ে কেনার লোভ সামলাতে পারলাম না, কারণ ঢাকায় ১২০-১৪০টাকা করে আম কিনে খেতি পারি না হরহামেশা। ওই দরেই কিনলাম।
আম বাগানের মালিক যিনি ছিলেন, উনি ছিলেন আদিবাসী। বয়েস ৮০-৯০ কিংবা আরও বেশি হতে পারে। উনি পিঠ থেকে না হয় কমপক্ষে ৩০ কেজির মত আমের একটা খাঁচা নামালেন। এর পর পরই উনার স্ত্রী আসলেন।বয়েস ৭০ এর কম হবে না। উনার পিঠেও ২০ কেজির মতই এক খাঁচা ছিল। আমার টিউশনি করে পেট চালানো শহুরে মনে একটা সুক্ষ্ম পাপ বোধ হলো দামাদামি করার জন্য। অতএব, শুরুতে ৩ কেজি নিব ভেবেও পরে ৫ কেজি নিলাম। এই অস্বাভাবিক পরিশ্রম করা মানুষগুলা এমন ভাবে আপ্পায়ন করতেসিল, যেন আমি পাহাড়ের অতিথি, অতিথিকে বেছে বেছে সেরা আম গুলা দিতে হবে, আম নিয়ে অতিথি শহরে যাবে বলে কথা!
গাড়িতে প্রায় ১৫-১৬ মাইল যাওয়ার পর একটা পাড়া দেখলাম। অতিউৎসাহী আমি মাথা বের করে যখনই ভাবতেসি "আহা! আমি যদি এইখানে থাকতে পারতাম।" এক ঝলকে একটা ৫-৬ বছরের ছোট্ট আদিবাসী মেয়েকে দেখলাম। স্কুল ড্রেস পড়া। হাতে বই। আমি সাথে সাথে হাত নেড়ে হাই দিতেই, মেয়েটা হেসে গুড়োগুড়ো হয়ে গেল। বিশ্বাস করেন, এত মিষ্টি হাসি আমি এখন নাগাদ আর দ্বিতীয়টা দেখি নাই। গাড়ি সাঁই করে টান দিল। আর আমার কাছে বাচ্চাটার হাসিটা ছবি হয়ে রয়ে গেল। আর রয়ে গেল যে ইচ্ছাটা সেটা হল - ওকে কোলে করে নিয়ে এসে যদি আমার শহুরে স্কুলে পড়াইতে পারতাম! আর সেটা না পারলে, যদি ওর বাড়ির কাছে একটা ভালো স্কুলের ব্যবস্থা করতে পারতাম!
জানেন? আমার শহুরে পা গুলো প্রচুর বিদ্রোহ করে।
১০ মিনিট হেঁটেই রিক্সায় চড়তে চায়। কিন্তু আমি পাহাড়ে গিয়ে চেয়ে দেখি যে আদিবাসী পা গুলো কত জেদী! মধ্যাকর্ষন শক্তির ধার না ধেরে মাথায় ফল, তরকারি নিয়ে মাইলের পর মেইল সোজা উপরে উঠে যায়।
আরেকটা বিষয় বলি? পাহাড়ের রক্তজবা অদ্ভুত টকটকে লাল। আমি অবাক হয়ে গেছি এই লালের সাথে আমাদের সমতলের রক্তজবার অনেক ফারাক। আদিবাসীরা অভাবনীয় ঘামঝরা পরিশ্রম করেই হয়ত তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় এত তীব্র লাল রক্তজবা ফোটায়। আর আমাদের শহুরে জবার প্রাণ যায় যায় করে, ভয়ে থাকে না জানি কবে তার গাছটা কাটা পড়ে!
আমার শহুরে মনের একটা কোণে একটা পাহাড়ী ছবি নিয়ে ফেরত আসি দালানের নগরে। ভাবতে থাকি এদের সমতলের কত কিছুর উপর অধিকার আছে - বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, নেটওয়ার্ক, ফুড সাপ্লাই, ভালো মানের শিক্ষা, আরও হাজারটা জিনিস। অথচ উনাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবার মানুষ এত কম! এত কম মানুষের মধ্যেও ছিল এক কল্পনা চাকমা, যে পাহাড়ের সুখ দুঃখ বুঝত, পাহাড়ের গলায় কথা বলত। অথচ কল্পনা চাকমা হারিয়ে গেল।১৯৯৬ সাল থেকে আজ আটাশ বছর পেরিয়ে গেছে, তবু আর ফিরল না পাহাড়ে। পাহাড় কী কল্পনা চাকমাকে ভুলতে পেরেছে?
নতুন বাংলাদেশে 🇧🇩 আর কোনো কল্পনা চাকমা হারিয়ে না যাক। শুভ হোক আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।
Original song courtesy : Farzana Wahid Shayan
#EtaKolponaChakmarGan
#shayan #song #bengalisong
সময়টা ছিল জুন মাসের ৬ তারিখ। আমরা যারা মফস্বল থেকে ঢাকায় এসে খোপ গেড়ে বসি, তারা জানি টানা মাস ছয়েক গেলেই কেমন দম বন্ধ লাগে। বাড়ির জন্যে মন কেমন করে, বাড়ির পাশের বাতাস শোকার জন্য ফুসফুস হাহাকার করে। হয় বাড়ি যাই, না হয় আমরা একটু প্রকৃতির কাছে যাই।
আমার ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টা থেরাপিউটিক মেডিসিনের মত কাজ করে। পাহাড় ছাড়া অদ্ভুত সুন্দর সবুজের বিকল্প পাই না আমি। খেয়ে না খেয়ে টাকা জমিয়ে হলেও একটু পাহাড়ে যাওয়া চাই। টাকার যোগাড় কম হলে ট্রেনের মেঝেতে বসেই সই। তবু পাহাড়ে যাওয়া চাই।
এইটুকু গল্প আমাদের শহরের মন ভালোই জানে। কিন্তু আমাদের শহরের মন পাহাড়ের মানুষের মন কতটাই বা বোঝে?
প্রতিবার পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রচুর টগবগ রক্তপ্রবাহ নিয়ে বের হই, এড্রেনালিন রাশে মাথা ফেটে যায়। অথচ ফেরার সময় প্রতিবার বুক ভারী লাগে। প্রতিবার ফিরে পানি ব্যবহারে আরও সচেতন হই, কারণ আমরা যান্ত্রিক মানুষেরা কল ঘুরালেই গলগল করে বেরিয়ে আসে পানি। গাড়ি করে পাহাড়ি রাস্তা দেখে চোখ যখন "আহা! মধু।" করে, তখনই বুক কেঁপে উঠে ৩-৪ বছরের ছোট বাচ্চাগুলোকে ২-৩লিটার পানির বোতল পিঠে করে মায়ের সাথে উপরে উঠতে দেখে। আর ওদিকে মায়ের পিঠে বোধহয় পানির বোতলের জাহাজ হবে।
পাহাড়ে গিয়ে এবার আম কিনলাম- প্রতি কেজি ৪০টাকা মাত্র। মধ্যবিত্তর সন্তান, সবকিছুতেই দামাদামি করার স্বভাব। ৪০ থেকেও ভেবেছিলাম কিছু কম দিয়ে কেনা যায় কীনা।
প্রচুর সস্তা আম পেয়ে কেনার লোভ সামলাতে পারলাম না, কারণ ঢাকায় ১২০-১৪০টাকা করে আম কিনে খেতি পারি না হরহামেশা। ওই দরেই কিনলাম।
আম বাগানের মালিক যিনি ছিলেন, উনি ছিলেন আদিবাসী। বয়েস ৮০-৯০ কিংবা আরও বেশি হতে পারে। উনি পিঠ থেকে না হয় কমপক্ষে ৩০ কেজির মত আমের একটা খাঁচা নামালেন। এর পর পরই উনার স্ত্রী আসলেন।বয়েস ৭০ এর কম হবে না। উনার পিঠেও ২০ কেজির মতই এক খাঁচা ছিল। আমার টিউশনি করে পেট চালানো শহুরে মনে একটা সুক্ষ্ম পাপ বোধ হলো দামাদামি করার জন্য। অতএব, শুরুতে ৩ কেজি নিব ভেবেও পরে ৫ কেজি নিলাম। এই অস্বাভাবিক পরিশ্রম করা মানুষগুলা এমন ভাবে আপ্পায়ন করতেসিল, যেন আমি পাহাড়ের অতিথি, অতিথিকে বেছে বেছে সেরা আম গুলা দিতে হবে, আম নিয়ে অতিথি শহরে যাবে বলে কথা!
গাড়িতে প্রায় ১৫-১৬ মাইল যাওয়ার পর একটা পাড়া দেখলাম। অতিউৎসাহী আমি মাথা বের করে যখনই ভাবতেসি "আহা! আমি যদি এইখানে থাকতে পারতাম।" এক ঝলকে একটা ৫-৬ বছরের ছোট্ট আদিবাসী মেয়েকে দেখলাম। স্কুল ড্রেস পড়া। হাতে বই। আমি সাথে সাথে হাত নেড়ে হাই দিতেই, মেয়েটা হেসে গুড়োগুড়ো হয়ে গেল। বিশ্বাস করেন, এত মিষ্টি হাসি আমি এখন নাগাদ আর দ্বিতীয়টা দেখি নাই। গাড়ি সাঁই করে টান দিল। আর আমার কাছে বাচ্চাটার হাসিটা ছবি হয়ে রয়ে গেল। আর রয়ে গেল যে ইচ্ছাটা সেটা হল - ওকে কোলে করে নিয়ে এসে যদি আমার শহুরে স্কুলে পড়াইতে পারতাম! আর সেটা না পারলে, যদি ওর বাড়ির কাছে একটা ভালো স্কুলের ব্যবস্থা করতে পারতাম!
জানেন? আমার শহুরে পা গুলো প্রচুর বিদ্রোহ করে।
১০ মিনিট হেঁটেই রিক্সায় চড়তে চায়। কিন্তু আমি পাহাড়ে গিয়ে চেয়ে দেখি যে আদিবাসী পা গুলো কত জেদী! মধ্যাকর্ষন শক্তির ধার না ধেরে মাথায় ফল, তরকারি নিয়ে মাইলের পর মেইল সোজা উপরে উঠে যায়।
আরেকটা বিষয় বলি? পাহাড়ের রক্তজবা অদ্ভুত টকটকে লাল। আমি অবাক হয়ে গেছি এই লালের সাথে আমাদের সমতলের রক্তজবার অনেক ফারাক। আদিবাসীরা অভাবনীয় ঘামঝরা পরিশ্রম করেই হয়ত তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় এত তীব্র লাল রক্তজবা ফোটায়। আর আমাদের শহুরে জবার প্রাণ যায় যায় করে, ভয়ে থাকে না জানি কবে তার গাছটা কাটা পড়ে!
আমার শহুরে মনের একটা কোণে একটা পাহাড়ী ছবি নিয়ে ফেরত আসি দালানের নগরে। ভাবতে থাকি এদের সমতলের কত কিছুর উপর অধিকার আছে - বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, নেটওয়ার্ক, ফুড সাপ্লাই, ভালো মানের শিক্ষা, আরও হাজারটা জিনিস। অথচ উনাদের অধিকার নিয়ে কথা বলবার মানুষ এত কম! এত কম মানুষের মধ্যেও ছিল এক কল্পনা চাকমা, যে পাহাড়ের সুখ দুঃখ বুঝত, পাহাড়ের গলায় কথা বলত। অথচ কল্পনা চাকমা হারিয়ে গেল।১৯৯৬ সাল থেকে আজ আটাশ বছর পেরিয়ে গেছে, তবু আর ফিরল না পাহাড়ে। পাহাড় কী কল্পনা চাকমাকে ভুলতে পেরেছে?
নতুন বাংলাদেশে 🇧🇩 আর কোনো কল্পনা চাকমা হারিয়ে না যাক। শুভ হোক আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।
Original song courtesy : Farzana Wahid Shayan
#EtaKolponaChakmarGan
#shayan #song #bengalisong